স্বাধীন বাংলাদেশের নেপথ্যের কাহিনী
'স্বাধীন বাংলাদেশের নেপথ্যের কাহিনী'
পাকিস্তান রাষ্ট্রই সৃস্টি হয় ইন্ডিয়া দ্বিখণ্ডিত করে, পূর্বাঞ্চলে পূর্ববাংলা এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৪ টি প্রদেশ সিন্ধু, বেলুচিস্তান, পশ্চিম পাঞ্জাব এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে । এখনকার বাংলাদেশ অন্তর্ভূক্ত থাকায় ৩ জন প্রধান মন্ত্রী হিসাবে পুরো পাকিস্তান শাসন করেছে।উনারা ৩ জন ছিলেন স্যার খাজা নাজুমদ্দিন, মোহাম্মাদ আলী বগুড়া এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এছাড়াও আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি পাকিস্তানের সংসদে, সংসদ সদস্য , স্পীকার এবং মন্ত্রী পরিষদে ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান জনসংখ্যা ভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব শীল পাকিস্তানের প্রথম সাধারন নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়। সামরিক সরকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। নির্বাচিত মুজিব সরকার যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে, পাকিস্তান হইতে স্বাধীন করে । এই যুদ্ধে সার্বজনীন ভাবে প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ,জনসাধারন,প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা , কর্মচারী ও কেন্দ্রীয় সরকারের বাংগালী সেনা অফিসার সহ সকলেই সতঃসফূর্ত ভাবে অংশ গ্রহন করে। ইন্ডিয়া ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ায়, কোন ইন্ডিয়ানের পক্ষেই ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় উল্লেখিত অনুরুপ অংশ গ্রহনের সুযোগ ছিল না। রাজনৈতিক বিবেচনায় আমরা পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিলাম না কিন্তু অনেক বৈষম্য ছিল ।
আইয়ুব খান(পাকিস্তান) ১৯২৮ সনে এবং মানেক শ (ভারত)১৯৩৪ সনে উভয়েই ২য় লেফটেন্যান্ট হিসাবে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেয়। এম এ জি ওসমানী (বাংলাদেশ)১৯৩৯ সনে পদাতিক বাহিনীতে যোগ দেয়। তার অসাধারন কর্মদক্ষতার কারনে ১৯৪২ সনে মেজর পদে পদোন্নতি হয়, যা বিরল ঘটনা। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় এম এ জি ওসমানী, মানেক শ ও আইয়ুব খান ৩ জনই মেজর( acting/temporary/ substantive/,war substantive) হিসাবে ছিলেন। ৩ জনই ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সেনা অফিসার হিসাবে ২য় বিশ্ব যুদ্ধ করে। এম এ জি ওসমানী পড়াশুনা করে আলীগড় থেকে। উনি আই-সি-এস অফিসারও ছিলেন। উনার বিরল পদোন্নতির সুখ্যাতির আলোচনা ছিল ইন্ডিয়ান আর্মির কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনকি অখন্ড ইন্ডিয়াতে যুদ্ধের ব্যাপারে খোজ খবর রাখা ব্যক্তিদের নিকট উনি পরিচিত ছিল।ভারত, পাকিস্তান ভাগের সময় ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সেনা সম্পত্তি উভয় দেশের মধ্যে ভাগ করা হয়। ভাগের সময় উনি পাকিস্তানের পক্ষে সাক্ষী ছিলেন। এত কিছুর পরেও, উনি ১৯৬৭সনে কর্নেল হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত হন। আইয়ুব খান ১৯৫৭ সনে জেনারেল হয়; পরবর্তিতে ক্যূ র মাধ্যমে শাসক হয়ে ছিল।মানেক শ ভারতে প্রথমে জেনারেল এবং পরবর্তিতে ফিল্ড মার্শাল হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত হন। এম এ জি ওছমানীকে বঞ্চনার প্রতীক হিসাবে গন্য করা যুক্তিযুক্ত হবে। পাকিস্তান আমলে প্রতিটি বাংগালীর জীবন ছিল অনুরুপ।
এই অবস্থার জন্য আমাদেরও দায়ভার আছে। পাকিস্তান সৃস্টির পর থেকে ৫ টি প্রদেশ নিজ নামে প্রাদেশিক সরকার এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ছিল। প্রধান মন্ত্রী মোহাম্মাদ আলী বগুড়া ১৯৫৪ সনে ওয়ান উনিট স্কীম ঘোষনা করে এবং ১৯৫৫ সনে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে কার্য্যকর করা হয়। এই ব্যবস্থার ফলে পাকিস্তান ২ টা প্রদেশে রুপান্তরিত হয়। পূর্ববাংলা হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান এবং অপর ৪ টি প্রদেশে মিলে হয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তান । সেই সাথে কার্য্যকরী করা হয় “সংখ্যা সাম্য” নীতি যার ফলে, ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত জন প্রতিনিধি উভয় প্রদেশের সমান ছিল। পূর্ব পাকিস্তান জন সংখ্যার বিচারে সংখ্যাগরিষ্ঠ। সংখ্যা সাম্যের ফলে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের ১৫০ জন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হত উভয় প্রদেশে থেকে। ১৯৬৯ সনে গন আন্দোলনের ফলে আইয়ুব খানের পতন হয়, প্রেসিডেন্ট হন ইয়াহিয়া খান। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, ইয়াহিয়া খান ওয়ান ইউনিট বাতিল করে ৪ টি প্রদেশ পুনর্জীবিত এবং জন সংখ্যা ভিত্তিক জন প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। এই ব্যবস্থার ফলে ১৯৭০ সনের জাতীয় পরিষদে ৩০০ সিটের মধ্যে ১৬২ টি সীট পূর্বপাকিস্তানে আর বাকী ১৩৮ টি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। আওয়ামী লীগ ঐ নির্বাচনে ১৬০ সিটে( সকল সিট পূর্ব পাকিস্তানে) বিজয়ী হয়ে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়, যা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট । ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করায়, যুদ্ধের মাধ্যেমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ।
১৯৫২ সনের ২১ শে ফেব্রয়ারী আমদের গর্বের । এমনকি সকল বাংলা ভাষাভাষী গর্ববোধ করে । ওই সময় পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন। প্রতিরোধ যেমন গর্বের, নিজ শাসকের হাতে গুলি খাওয়া তেমনি বেদনার !
জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে “ সংখ্যা সাম্য” এবং ভাষার ব্যাপারে আমাদেরও দায় আছে।
স্বাধীনতা সাধারনত অর্জিত হয় উপনেবৈশিক শক্তির কাছ থেকে। ১ টি স্বাধীন দেশও ভেংগে ২ দেশের উৎপত্তি হয় বিভিন্ন কারনে। যেমন ধরুন জার্মানী, ইয়েমেন, ইরিত্রিয়া, । পাকিস্তান ভেংগে বাংলাদেশ নামে ১ টি রাষ্ট্র সৃস্টি হয়েছে, মূলত পাঞ্জাবের সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের শাসন দীর্ঘস্থায়ীকরন এবং দুই অংশের মধ্যে পাহাড় পরিমান বৈষম্য।সবকিছু বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ কোন মতেই পাকিস্তানের উপনিবেশ ছিল না কিন্তু অস্বাভাবিক বৈষম্য ছিল। এমনও বলা যেতে পারে “ আপন মা কিন্তু ব্যবহার সৎমায়ের চাইতেও খারাপ”।
করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষকের মতামত নিম্নে দেওয়া হইল।
The election results of December 1970 clearly showed that the conflict which led to the final break-up of Pakistan lay between Bengal and Punjab. If East Pakistan had overwhelmingly voted for Awami League, Bhutto’s PPP had swept in Punjab, which dominated the military and bureaucracy. Bhutto’s landslide victory in Punjab was sufficient to convince the Awami League that the nexus would never hand over power to the Bengali majority because of their suspicion, mistrust, antagonism and hatred against them. The Punjab-Bengal conflict and hostility eventually led to civil war in the then East Pakistan, and as a result, Bangladesh emerged.
(The writer is Meritorious Professor of International Relations at the University of Karachi. Email: amoonis@hotmail.com)
Published in Dawn, EOS, March 4th, 2018
উনার লেখা ৫ পৃষ্ঠা, এখানে অতীব জরুরী অংশ টুকু দেওয়া হল। কেউ ইনবক্স করলে, পুরোটায় পাঠানো হবে ।
আমাদের সাথে যুক্ত হোনঃ
ফেসবুক - Darpone Amra - Facebook
ইউটিউব - Darpone Amra - YouTube
ব্লগার - Dapone Amra - Blogger
No comments